,

মি টু আন্দোলন: মেয়েরাও খারাপ আছে!

মেয়েরাও খারাপ আছে!

অনলাইন ডেস্ক: মেয়েরাও খারাপ আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কস পাওয়ার জন্য নিজেরাই বিভাগীয় শিক্ষকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। চাকরী পাওয়ার জন্য বড় চাকরিজীবী অথবা বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর সঙ্গে ঘুরতে চলে যায়। চাকরীতে পদন্নোতির জন্য বসের সঙ্গে নিজে থেকেই শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করে…

এভাবে চিন্তা করা, এইভাবে বিশ্বাস করাদের সংখ্যাই সমাজে বেশি। এদের কারণেরই কোন একটা সুস্থ সংস্কার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে না। তাদের এই প্রতিবন্ধকমূলক বিষয়টা যতটা না ইচ্ছাকৃত, তার চাইতেও বেশি মূর্খতাজনিত। আক্ষরিক অর্থে এরা অনেক সক্রিয়ও বটে।

বর্তমান সমাজ-রাষ্ট্রের এই বুদ্ধিজীবীরা একটি মানুষের যৌনাঙ্গ দেখে বলে দিতে পারে- ব্যক্তি পুরুষ, না নারী। এটাই তাদের যোগ্যতা এবং সর্বোচ্চ পান্ডিত্বও। এরা প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানের বিশেষ অবস্থানে আরোহণ করে আছেন। এদের জ্ঞান এমন বলদের ন্যায়- যেখান থেকে দুধও হয়। এদের কাঁধে চড়েই বর্তমান পুঁজিনিয়ন্ত্রিত সমাজ-রাষ্ট্র এগিয়ে চলেছে। আবার এরাই কিন্তু নারীর প্রশংসা করে বক্তৃতা দেন। বলেন- নারী হচ্ছে মায়ের জাত, নারী সৌন্দর্যের আরেক নাম, কোমলতার প্রতীক, ধৈর্য্যের দৃষ্টান্ত, মমতাময়ী… ইত্যাদি ইত্যাদি।

এই বলার মধ্যের মতলবটা অনেক পুরনো। অর্থৎ নারী তুমি পরিবেশনযোগ্যই থাকো। ভোগ্যতাই তোমার চূড়ান্ত সাফল্য। সেটাই এখন বিশ্বায়নের যুগে একটু রং মিশিয়ে প্রচার পাচ্ছে প্রসার ঘটছে। তবে এই বুদ্ধিজীবীরা অত ভেবে-টেবে বলেন না। বা বিষয়টা জানেন না। জানার প্রয়োজনও হয় না। সন্ধায় গুরু-ছাগল যেভাবে খোয়াড়ে যায়- তাদের চিন্তাও বংশ পরম্পরায় এভাবেই এগিয়ে যায়; যেরকম বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রথম শ্রেণীর একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার মহিলা বিষয়ক সম্পাদকও একইভাবে মনে করেন- মেয়েদেরও দোষ আছে। এ বিষয়টি নিয়ে সর্বোচ্চ সার্টিফিকেটধারী অনেকের সঙ্গেই কথা বলেছি, লেখক সাংবাদিক সমাজে বুদ্ধিজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত অনেকের সঙ্গেই কথা বলে হতাশ হয়েছি।

মানুষের জীবনে খেলা থাকে। সেটা একটা অংশ মাত্র, তাও কারও কারও জীবনের। এখন সবকিছুতেই খেলা। আবার সেই খেলার মধ্যেও ঢুকে গেছে খেলা। যেমন রাজনীতির মধ্যে পলিটিক্স। মাঠের খেলাও হয়ে গেছে অর্থের (টাকার) খেলা। অর্থের মধ্যেও কালো বিড়াল সাদা বিড়ালের লেখা থাকে। কালো খেলতে খেলতে সাদা হয়ে যায়। এইসব খেলার কারনেই হয়ত মানুষের মধ্যে একটা রেফারি রেফারি ভাব চলে এসেছে। যে কোন বিষয়ের নিরপেক্ষতা তৈরি করে সে মোড়ল সেজে উভয়ের দোষ খুঁজে দেখাবার জন্য যুক্তি দাঁড় করাতে উঠে পড়ে লেগে যায়।

কিন্তু এরা জানে না যে- জীবন খেলা না। জীবনকে মাপতে হয় সত্য দিয়ে, ইমোশন দিয়ে, ভালবাসা দিয়ে; নিরপেক্ষতা দিয়ে নয়। মেয়েদের যৌননির্যাতন সংক্রান্ত আলোচনায় পাওয়া- ‘মেয়েরাও খারাপ আছে’ বলা-দের ব্যাখ্যা দিতে চাই।

১. ধরলাম বেশি মার্কস পাওয়ার জন্য কোন ছাত্রী শিক্ষকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছে। সেটা যদি ছাত্রীটির দোষ হয়- তাহলে শারীরিক সম্পর্কে জড়ানোর বিনিময়ে মার্কস দেয়া কোন আইন বা কোন নীতিতে আছে? মেয়েটি যদি প্রাপ্য নম্বর পাওয়ার যোগ্য না হয়- তাহলে এই সম্পর্কের বিনিময়ে তাকে নাম্বার দেয়া কী অপরাধ না? বরং পুরুষনিয়ন্ত্রিত সমাজে বেশি নম্বর পাওয়ার যোগ্যকে অল্প নম্বর দিয়ে অথবা না দিয়ে চাপে রেখে লালসার শিকারে পরিণত করার অভিযোগ উঠলে- সেটাই সত্য হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

২. কুসংস্কারাচ্ছন্ন, নারীবিদ্বেষী এবং আর্থ-সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া সমাজ থেকে একটা মেয়ের শিক্ষিত হয়ে ওঠা বা কাজের যোগ্য হয়ে ওঠা অনেক চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। সেই চ্যালেঞ্জ উৎরে সে তার যোগ্যতায় চাকরি/কাজ পেতেই পারে। তার প্রাপ্যটা তাকে না দিয়ে- আপনি যদি চাকরি/কাজের প্রলোভন দেখিয়ে ফায়দা লুটতে চান, সেটা কেন অপরাধ হবে না?

৩. এই কথাটিও আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। একই সঙ্গে একই পজিশনে কাজ করা ৫ জনের মধ্যে যদি একজন(সাধারনত রেশিওটা এমনই) মেয়ে থাকে- পদন্নোতির আগে অন্যদের কথা-বার্তা এমন থাকে যে- ওর(মেয়েটির) তো হয়েই যাবে। মেয়ে মানুষ। আর যদি সত্যি সত্যি হয়ও, এই নিয়ে অন্যরা অনেক অনেক গল্প কাহিনী রচনা করেন। হয়ত বসের সাথে মেয়েটিকে একই সময়ে কেউ থাইল্যান্ড কেউ সিঙ্গাপুর কেউ আমেরিকা অথবা ব্যাংককে দেখেছেন বলে দাবী করবেন।

আমি বলছি না যে মেয়েরা নিজ আগ্রহে কারও সাথে শারীরিকভাবে জড়ান না। এবং এও বলছি না যে নিজের ইচ্ছায় প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়ের এমনটা করা অন্যায়। ভাল খারাপের বিষয়টা প্রাকৃতিকভাবেই সবার মধ্যে অনেক আগেও ছিল এখনও আছে পরেও থাকবে। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক আর্থ-সামাজিক বলয়ের সুযোগে যদি পুরুষের মন এই নির্যাতন প্রাতিষ্ঠানিক রুপ আশা করে- তাহলে মানুষ সেই আদিম অসভ্যই শুধু রয়ে গেল না, বরং তার পৈশাচিকতা কৌশলগতভাবে আরও ধারালো হল।

এই বিভাগের আরও খবর